মোট পৃষ্ঠাদর্শন

শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫

দিঘা জগন্নাথ মন্দির প্রসঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ


 

দিঘা জগন্নাথ মন্দির: একটি সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ।

দিঘার জগন্নাথ মন্দিরটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলীয় শহর দিঘায় অবস্থিত। এটি ভগবান জগন্নাথকে উৎসর্গীকৃত একটি হিন্দু মন্দির, যেখানে বিষ্ণুর রূপ জগন্নাথ এবং তাঁর ভাই বলভদ্র ও বোন সুভদ্রার মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে নির্মিত এই মন্দিরটি কলিঙ্গ স্থাপত্যের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ৬৫ মিটার (২১৩ ফুট) উচ্চতার এই মন্দিরে ভিয়েতনাম থেকে আনা মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে, যা এর সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করেছে।

মন্দিরটি দিঘা রেল স্টেশনের পাশে প্রায় ২৫ একর জমির উপর নির্মিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের ঘোষণা করেন এবং ২০২২ সালের অক্ষয় তৃতীয়ার দিন এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ মন্দিরের নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে ছিল এবং ২০২৫ সালের ৩০শে এপ্রিল মন্দিরটি জনসাধারণের জন্য খোলা হয়।

তবে, এই মন্দিরের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়েত গোষ্ঠী দিঘায় পুরীর মন্দিরের আচার-অনুষ্ঠান প্রতিলিপি করার বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা মনে করেন, এর ফলে পুরীর ঐতিহ্য ও আধ্যাত্মিকIntegrity ক্ষুণ্ণ হবে। এমনকি, দিঘার মন্দিরে ভোগ রান্না ও দেবতাদের সাজসজ্জার কাজে অংশ না নেওয়ার জন্য পুরীর সেবায়েতদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং অমান্য করলে সামাজিক বয়কটের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মনে করা হচ্ছে, এটি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মোকাবিলা করার একটি কৌশল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তিগতভাবে এই প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করেছেন, যা এই ঘটনার রাজনৈতিক গুরুত্বকে স্পষ্ট করে। বিজেপি এই মন্দির নির্মাণে সরকারি অর্থ ব্যবহারের সমালোচনা করেছে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে "ভুয়া হিন্দু" আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, মন্দির জনগণের দানের অর্থে নির্মিত হয়, সরকারি অর্থে নয়। তারা এটিকে একটি "সাংস্কৃতিক কেন্দ্র" হিসেবে অভিহিত করেছে, ধর্মীয় মন্দির নয়।

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের বক্তব্য, মন্দির সকলের জন্য এবং এটি কোনো রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে। তারা বিজেপির হিন্দুত্বের সংজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপ হিন্দু ভোটব্যাংকে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে সাহায্য করবে। দিঘার মতো একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে জগন্নাথ মন্দির নির্মিত হওয়ায়, এটি ধর্মীয় পর্যটনের প্রসারেও সহায়ক হবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারাও এই মন্দিরকে ঘিরে অর্থনৈতিক উন্নতির স্বপ্ন দেখছেন।

তবে, কিছু স্থানীয় ব্যবসায়ী তাদের দোকানপাট ভেঙে দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং মন্দির উদ্বোধনে স্থানীয়দের আমন্ত্রণ না জানানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

পরিশেষে বলা যায়, দিঘার জগন্নাথ মন্দির শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গ politics এবং tourism-এর ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এর নির্মাণ এবং উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা আগামী দিনে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এআই

বৈশিষ্ট্যযুক্ত খবর

সাংবাদিকতায় নতুন প্রজন্মকে আহবান

 Bartamaan বাংলা সংবাদ পোর্টালে সাংবাদিক হিসেবে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য আবেদনপত্র email করুন ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে।

জনপ্রিয় পোস্টগুলি